সুষম ও অসুষম খাদ্য (পাঠ-৮)

ষষ্ঠ শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - খাদ্য ও পুষ্টি | NCTB BOOK
447

জয়া ও জিতু দুই বন্ধু। ওরা দুজনই ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। জয়া শুকনা, পাতলা গড়নের, দুর্বল ও পড়ালেখায় অমনযোগী। সবসময় ওকে মনমরা দেখায়। প্রায়ই অসুস্থতার কারণে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকে। জিতু একদিন জয়াদের বাড়িতে বেড়াতে গেল। সে জয়ার মায়ের কাছ থেকে জানতে পারল জয়া নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া করে না। সে যেটুকু খাবার খায় তাতে ভাত, মাছ ও মাংসের পরিমাণ থাকে সামান্য। ডিম, দুধ, ফল-মূল ও শাকসবজি একেবারেই খায় না। মা জোর করেও ওগুলো তাকে খাওয়াতে পারেন না। মা ওকে নিয়ে বেশ চিন্তিত। তাহলে বল তো জয়ার খাবার তালিকাটি কী সঠিক? সে শর্করা ও প্রোটিন জাতীয় খাবার খায় সামান্য পরিমাণ। অন্যান্য খাবার না খাওয়ায় ওর দেহে ভিটামিন, খনিজ লবণ ও অন্যান্য উপাদানের ঘাটতি রয়েছে। অর্থাৎ ওর খাবার তালিকাটি সুষম নয়। কারণ যে খাবার তালিকায় সব কয়টি খাদ্য উপাদান থাকে না, সেটি সুষম খাদ্যের তালিকা নয়।
সুষম খাদ্য বলতে আমরা কী বুঝি? সুষম খাদ্য বলতে আমরা সেই সকল খাবার বুঝি, যাতে প্রয়োজনীয় সকল খাদ্য উপাদান পরিমাণ মতো থাকে। অর্থাৎ প্রোটিন, শর্করা, চর্বি, ভিটামিন ও পানি দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে থাকে। সুষম খাদ্য খেতে হলে আমাদের খাদ্য তালিকায় শর্করা, প্রোটিন, তেল বা চর্বি জাতীয় খাদ্য, ভিটামিন ও খনিজ লবণের উপাদান থাকা আবশ্যক।
জয়া যে খাবার খাচ্ছে তা সুষম না হওয়ায় দেহের বৃদ্ধি ঘটছে না, কাজে শক্তি পায় না। দুর্বল বোধ করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ কম। স্বাভাবিক বৃদ্ধি, কর্মশক্তি উৎপাদন ও শরীরকে রোগমুক্ত রাখার জন্য আমাদের নিয়মিত সুষম খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।
অসুষম খাদ্য: খাদ্য তালিকায় ছয়টি খাদ্য উপাদানের যে কোনো একটি কম থাকলে বা না থাকলে তাকে অসুষম খাদ্য বা অসম খাদ্য বলে। আমাদের দেশে বেশির ভাগ লোকের খাদ্যই অসম। সাধারণ মানুষের খাদ্যের প্রায় সম্পূর্ণটাই শর্করা। খাদ্যে প্রোটিন, শর্করা, খনিজ লবণ এবং ভিটামিন পরিমাণের চেয়ে কম থাকলে দেহে পুষ্টির অভাব ঘটে। অর্থাৎ দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাবকে অপুষ্টি বা পুষ্টিহীনতা বলে থাকি।

স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্য খাওয়ার জন্য নিম্মলিখিত বিষয়গুলো মনে রাখা প্রয়োজন। যথা-

  • শর্করা জাতীয় খাদ্য বেশি খেতে হবে।
  • যথেষ্ট পরিমাণ শাকসবজি খেতে হবে।
  • মাছ বেশি খেতে হবে।
  • মিষ্টি ও তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার কম খেতে হবে।
  • লবণ কম খেতে হবে।
কাজ: শিক্ষার্থীরা দলগত ভাবে স্থানীয় সহজলভ্য বিভিন্ন খাদ্য সংগ্রহ করবে। সংগৃহীত খাদ্য উপাদানগুলো শ্রেণিতে প্রদর্শন করবে। এগুলোর প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে।

এ অধ্যায়ে আমরা যা শিখলাম

  • খাদ্য তিন প্রকার।
  • খাদ্য উপাদান ছয় প্রকার।
  • ভিটামিন ও খনিজ লবণ আলাদা কোনো খাদ্য নয়। এ উপাদানগুলো শাকসবজি ও ফলমূলের মধ্যে থাকে।
  • অতিরিক্ত প্রোটিন বা শ্বেতসার খাওয়া উচিত নয়।
  • সুষম খাদ্য আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজন।
  • খাদ্যের তাপশক্তি মাপার একক কিলোক্যালরি। প্রতিদিন কার কত তাপশক্তি বা ক্যালরি প্রয়োজন তা নির্ভর করে বয়স, ওজন, দৈহিক উচ্চতা ও পরিশ্রমের ধরনের উপর।


Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...